Saturday, July 22, 2017

ইলেকট্রনিক লেনদেন বা ই-পেমেন্ট এবং পণ্য সরবরাহ বা লজিস্টিক ফ্রেমওয়ার্ক না থাকায় দেশে বিকাশমান ই-কমার্সের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলছেন " ইলেকট্রনিক লেনদেন বা ই-পেমেন্ট এবং পণ্য সরবরাহ বা লজিস্টিক ফ্রেমওয়ার্ক না থাকায় দেশে বিকাশমান ই-কমার্সের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার ও ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সঙ্গে যৌথভাবে মাস্টারকার্ড, এসএসএল ওয়্যারলেস এবং টেকনোহ্যাভেনের পৃষ্ঠপোষকতায় ই-কমার্স পেমেন্টস ও লজিস্টিকসের উপর আয়োজিত সেমিনারে এ মন্তব্য করেন বক্তারা।" 
Source...

কিন্তু আসলেও কি ব্যাপারটা তাই ...

আদৌ কি ই-পেমেন্ট বা লজিস্টিক সাপোর্ট দায়ী !!! শতকরা ৯৫% বা তারও উপরে ই-কমার্স লেনদেন হয় ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে। কেন হয়??? কারন হাতে গোনা দু একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউই ব্র্যান্ড ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে না যেখানে ব্র্যান্ড ডেভলপমেন্টের মাধ্যমে ক্রেতার বিশ্বাস অর্জন করতে হয় সেখানে আমাদের দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে ব্যাস্ত। অর্থাৎ ক্রেতা মূলত একটি প্রতিষ্ঠানের উপর বিশ্বাস করছে “ ক্যাশ অন ডেলিভারির” সেবার কারনে , কারণ এই ক্ষেত্রে কোন কারনে অর্ডারকৃত পণ্য পছন্দ না হলে ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে এবং পণ্য পছন্দ করে হাতে পাবার পর মূল্য পরিশোধের সুযোগ থাকে। অন্যদিকে যারা আগেই অনলাইনে মূল্য পরিশোধ করে থাকে তারা বিশেষ কোন সুবিধা পান না, বরং কোন কারনে পণ্য পছন্দ না হলে সেটা টাকা রিফান্ড পেতে সপ্তাহ খানেকের বেশী সময়ও লেগে যায়। আলিবাবার’র মত কোম্পানিতে আমরা চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে অগ্রিম পেমেন্ট করে দেই শুধু মাত্র তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ আর পেমেন্ট পলিসির জন্য। সেখানে আমাদের দেশে কেউ ব্র্যান্ডের পেছনে ইনভেস্ট করতে আগ্রহী নয় যদিও পণ্য মার্কেটিং এর পেছনে বড় প্রতিষ্ঠান গুলো ভালোই খরচ করছে। অন্যদিকে পেমেন্ট গেটওয়ে প্রোভাইডার রা অনলাইন কেনাকাটা র ক্ষেত্রে বিশেষ কোন সুবিধা প্রদান করে না, যেখানে ক্যাশ অন ডেলিভারি’র ক্ষেত্রে অন্তত পণ্য হাতে পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধের সুযোগ থাকে। সুতরাং জাতীয় পর্যায়ে ই-পেমেন্ট সেবা চালু করলেও এর মাধ্যমে সার্বিক ই-কমার্সের প্রসার কি আদৌ সম্ভব হবে এ নিয়ে যথেষ্ট ভাবার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

Saturday, June 10, 2017

একটি ব্যর্থ পরিকল্পনার গল্প এবং ফলাফল

দেশের প্রথম ক্লাসিফাইড সাইট হিসেবে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে তৎকালীন cellbazaar.com যা গ্রামীণফনের ভেঞ্ছার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিল ।২০০৮ সাল থেকে মূলত এই সাইটটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথে নিজের উপস্থিতি ধরে রাখতে পারলেও বিপত্তি শুরু হয় ২০১২ সালের শেষ নাগাত যখন কিনা আরেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান Bikroy.com বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারনার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে Bikroy.com বেচা-কেনার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। পরবর্তীতে টিভিসি, বিলবোর্ড সহ নানা ধরনের চোখ ধাঁধানো প্রচারণার সকল শ্রেনির মানুষ bikroy.com এর সার্ভিস ব্যাবহারে উৎসাহিত হয়েছে। পরিস্থিতি অনুমান করতে পেরে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখতে cellbazaar.com তাদের সাইটে ব্যাপক পরিবর্তন আনে যা আসলে ছিল পুরোপুরি Bikroy.com এর অনুলিপি অথবা কপি। উল্লেখ্য cellbazaar গ্রামীণফোনের একটি ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস হিসেবে বিবেচিত ছিল এবং শুধু মাত্র গ্রামীণফোনের নাম্বার ব্যাবহার করেই Cellbazaar এ নিবন্ধন করা যেত। কিন্তু রেজিস্টার্ড ব্যাবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর কৌশল হিসেবে cellbazaar যে কোন মোবাইল ব্যাবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় যা সম্ভবত পূর্বে নিবন্ধিত ব্যবহারকারীরা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে নি। সেই সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার কৌশল হিসেবে সম্পূর্ণ ভাবে Bikroy.com সাইটটি কপি করার ফলে মূলত Cellbazaar ই আসলে Bikroy.com কে প্রমোট করতে থাকে। কোন অজ্ঞাত কারনে cellbazaar এর ব্র্যান্ড টিম এই ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে অনুমান করতে ব্যর্থ হয়। সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হয় ২০১৪ সালের জুন মাসে যখন কিনা cellbazaar তার নাম পরিবর্তন করে ekhanei.com করে। যা ব্র্যান্ড টিমের আরেক ব্যর্থতা । গ্রামীণফেনের লাল-সবুজ লোগো টেলিনরের নীল লোগো দিয়ে রিপ্লেস করার সময় যে পরিকল্পনা তারা করেছিল cellbazaar এর ক্ষেত্রে সেরকম কিছুই করা হয়নি। পরবর্তীতে OLX এর সাথে সমন্বিত ভাবে যাত্রা শুরু করলেও সঠিক পরিকল্পনা এবং সময়য়ের চাহিদা বুঝতে না পারায় এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয় নি। অন্যদিকে ফেসবুকে ব্যাবহারকারী বাড়তে থাকায় এবং buy-sell এর মত ফেসবুক গ্রুপগুলোর কারণে ekhanei.com(Cellbazaar) দিন দিন তার প্রয়োজনীয়তা হারাতে থাকে এবং এক সময় বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
একজন ই-কমার্স বিজনেস এনালিস্ট হিসেবে ২০১৩ সালে cellbazaar এর তৎকালীন সিইও Mr. Arild Klokkerhaug কে এই ব্যাপার গুলো সম্পর্কে আমি নিজেই অবহিত করেছিলাম কিন্তু সে সময় তারা গুরুত্বের সাথে এই ব্যাপার গুলো নিয়ে কাজ করেননি। সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে অন্যান্য ক্লাসিফাইড সাইটগুলোও এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারে।