Thursday, May 1, 2014

***** সম্ভাবনাময় এক ব্যাবসার নাম ই-কমার্স ****

(অবশ্যই ধৈর্য এবং সময় নিয়ে পড়বেন, আশাকরি আপনার সময়ের অপচয় হবে না)
চারিদিকে ই-কমার্স নিয়ে যে ঘূর্ণি ঝড় চলছে তা দেখে আর বসে থাকতে পারলাম না, মনে হল এবার হয়তো এ নিয়ে লেখা লেখির সময় এসেছে। প্রথমেই বলি আমি ই-কমার্স বিষয়ে মহান কোন বাক্তিত্ব নই। যেহেতু অভিজ্ঞতা না থাকলে এ ধরণের একটি পোস্ট করা একদমই মূল্যহীন এবং বেমানান তাই আমার অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরছি।
অনুপ্রেরণা, কাজ করার আগ্রহ এবং অভিজ্ঞতাঃ
২০০৩ সালে প্রথম ক্লিকবিডি.কম দেখে আনুপ্রানিত হই অনলাইন মার্কেট প্লেস সম্পর্কে। এরপর থেকে আমার কাছে ইন্টারনেট ব্রাউজিং মানেই ছিল ক্লিকবিডি.কম এ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানো । আশ্চর্য হতাম কত কিনা কিনতে পাওয়া যায় যা হয়তো এই সাইটা না থাকলে জানতামই না , এক জন মানুষের অপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিভাবে অন্য একজন মানুষের প্রয়োজন মেটায় ... ইত্যাদি ইত্যাদি। ২০০৬ সালে সেলবাজার এর জন্ম আমার চোখের সামনেই। এ রকম একটা সাইট দেখে আমার অবস্থা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবার মতই। দুই বছর খুবই আগ্রহ নিয়ে পরে থাকলাম ক্লিকবিডি আর সেল বাজার এর উপর। বুঝতে বাকী রইলনা, কতটা সম্ভাবনাময় হতে পারে এই সেক্টরটা।
সাহস করে পথে নামাঃ
২০০৮ এ দিকে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না , ১৫,০০০ টাকা মূলধন নিতে মাঠে নেমে পড়লাম। ক্লিকবিডি আর সেল বাজার এ একাউন্ট খুললাম, ট্রেড করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন ২ টি মোবাইল সংযোগ নিলাম। যেহেতু ইতিমধ্যে অনেক দিন ধরেই অনলাইন মার্কেটপ্লেস এর সাথে আমি পরিচিত তাই খুব ভালো করেই জানতাম কোন ধরণের পণ্য মানুষ অনলাইনে দেখে কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবে। বাস্তবে মোটেও তার ব্যাতিক্রম হল না। সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট আর মোতালেব প্লাজা বিভিন্ন ধরণের মোবাইল এবং কম্পিউটার এক্সোসরিস সংগ্রহ করতে থাকি এবং ক্লিকবিডি আর সেল বাজার এর মাধ্যমে পণ্য গুলো প্রোমোট করতে থকি। অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি যা কখন কল্পনাও করতে পারিনি। অনেকেই আমার মত শুরু করেছিলেন কিন্তু সত্যি বলতে প্রতিযগিতায় আমার আশেপাশেও আসতে পারেননি।
প্রতিযোগিতায় নিজের অনড় অবস্থানঃ
যে পণ্য আমি বিক্রি করছিলাম ১,৯৫০ টাকায় একই পণ্য অন্যরা বিক্রি করত ১,৬০০ টাকায় [ বিঃদ্রঃ এই বিষয়ে আমি একটি পোস্ট লিখতে চেয়েছিলাম, যেহেতু এখানে বিস্তারিত আলোচনা করব তাই পৃথক ভাবে আর কোন পোস্ট দিচ্ছনা ] । নিজেই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম ১,৬০০ টাকার পণ্য বাদ দিয়ে মানুষ আমার পণ্য কেন কিনছে ? উত্তরটা খুঁজে পেতে মোটেও সমস্যা হল না। আমি যাদের মাধ্যমে পণ্য গুলো সংগ্রহ করতাম তারা সবাই (সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট এবং মোতালেব প্লাজা’র পাইকারি পণ্য বিক্রেতা) জানতো আমার পুঁজি কম, কোন দোকান বা শোরুম নেই এবং আমি শুধু মাত্র অনলাইন এর মাধমেই পণ্য বিক্রি করি যে কারণে কখনই তারা(মোটেও সবাই না) আমাকে লো-গ্রেডেড পণ্য দেয়নি বরং অনেকই উৎসাহিত করেছে এমনকি মাঝে মাঝে এমনটাও হয়েছে যে কোন পণ্য আমি বিক্রি করতে পারিনি পরবর্তীতে সেটা পরিবর্তন করে অন্য পণ্য নিয়ে এসেছি । এমন সুযোগ হয়তো সবাই পায়না সম্ভবত আমি কিছুটা সৌভাগ্যবান ছিলাম ,তাই পেয়েছি।
১.অসাধারণ পণ্যঃ
একসময় আমার বহুল বিক্রীত পণ্যটি ছিল NOKIA BH 503 Bluetooth Headphone. যার তৎকালীন বিক্রয় মূল্য ছিল ১,৯৫০ টাকা আর আমার চারপাশের সবাই বিক্রি করত ১,৬০০-১,৮০০ টাকায়। আমি একমাসে সর্বোচ্চ ১২০ পিস হেডফোন সেল করেছি যা হয়তো অনেকের জন্য ভালো পজিশনে দোকান নিয়েও কারতে পারাটা কষ্টসাধ্য । চলুন জানা যাক এই রহস্যের পেছনের কথা।
মোবাইল এক্সোসরিস এবং বিভিন্ন গ্যাঁজেট এর প্রতি আমার দুর্বলতা অনেক আগে থেকেই। তো নিজেই যখন কিনা এই ধরণের পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করছিলাম তখন আর লোভ সামলাতে পারিনি, প্রতিটা পণ্যের এক পিস করে স্যাম্পল নিজের কালেকশনেই রেখে দিতাম এবং খুব আগ্রহ সহকারে ব্যাবহার করতাম। ফলাফল , প্রতিটা পণ্য কতক্ষণ ব্যাকআপ দেয়, কতক্ষণ চার্জ দিতে হবে, সাউন্ড কোয়ালিটি কেমন, কীভাবে ব্যাবহার করতে হবে, কি কি ফিচার ইত্যাদি খুঁটি-নাটি সব বিষয় গুলোই খুব ভালো ভাবে নিজে জানতাম এবং অনলাইনে অ্যাড দেবার সময় বিশেষ ভাবে ব্যাপার গুলো উপস্থাপন করতাম। কথা আর কাজের মিল থাকায় মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে মোটেও সমস্যায় পড়তে হয়নি, বরং ক্লাইন্ট খুশী হয়েই তার পরিচিত সবার কাছে আমকে রেফার করে দিত।
২. মার্কেটিং
আমি বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তা সবাইকেই কোন না কোন দিক দিয়ে অসাধারণ মেধা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মনে করি আমার মেধাটা শুধুই মার্কেটিং আর প্লানিং নিয়ে। কিছুক্ষণ আগেই একটা কথা লিখেছিলাম “কথা আর কাজের মিল থাকায় মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে মোটেও সমস্যায় পড়তে হয়নি, বরং ক্লাইন্ট খুশী হয়েই তার পরিচিত সবার কাছে আমকে রেফার করে দিত ” ... যেসব জায়গায় আমাকে রেফার করার হতো তার অধিকাংশই ছিল অফিস তাও আবার গ্রামীণফোন, এরিক্সন , রেডিও ফুর্তি, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সিটিসেল ... এই ধরণের হাই-প্রোফাইল কর্পোরেট অফিসে যারা কিনা বেশ সৌখিন ধরণের মানুষ। তো আমি প্রোডাক্ট নিয়ে সবাইকে ডেলিভারি দিতাম এবং আমার বিশাল বড় কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগটায় সবসময়ই বিভিন্ন রকম পণ্য বোঝাই থাকতো। ফলাফল, সবাই একরকম হুমড়ি খেয়ে পড়তো আমার কাছে আর কি কি পণ্য আছে সেটা দেখা এবং নেয়ার জন্য এবং যেহেতু পণ্য গুলো সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারণা ছিল তাই সেকেন্ডের মধ্যেই পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বলে দিতে পারতাম। প্রতিটা অফিসে একবার প্রবেশ করা মানেই ২/১ দিন পর পর অর্ডার পাওয়া এবং কথা আর কাজের মিল থাকায় একটা মানুষ নিজ থেকেই অন্য একটা মানুষকে রেফার করে দিত।
৩. রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ভ্যালু এডিশনঃ
আজকে আমার মার্কেটে দখল আছে বলে যে কালেও থাকবে তা ভাবাটা চরম বোকামী এবং এই বোকামীটি আমি করিনি। বুঝতে পারছিলাম কম্পিটিটররা আমার স্ট্যটেজি ফলো করা শরু করে দিয়েছে , যার দরুন আমি বাধ্য হচ্ছি দিন দিন প্রোডাক্ট এরদাম কমাতে। এদিকে অন্যরা, মানে যারা কিনা ইতিমধ্যেই আমার থেকে পণ্য নিয়েছে তারা ব্যাপারটা অবশ্যই ভালোভাবে মেনে নিতে পারবে না যদি কিনা এখন পণ্যের দাম কমে যায়। সোজা কথায় আমার সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা হয়ে যাবে। এরপরই শুরু করলাম “ভ্যালু এডিশন প্রোগ্রাম” পোর্টেবল স্পীকার এর সাথে চার্জার মেমোরি কার্ড অ্যাড্যাপ্টার ফ্রি, হেডফোনের সাথে পাউচ ফ্রি ইত্যাদি। ফলাফল যেটা দাঁড়ালো , তা হল ৩০ টাকা অতিরিক্ত খরচ করে ২০ টাকা অতিরিক্ত লাভ করা অন্যদিক ফ্রি পেতে সবাই পছন্দ করে তাই কাস্টোমারও খুশী। মাস খানেক এর মধ্যেই আবার সেই পুরনো সমস্যা দেখা দিল “কম্পিটিটররা আমার স্ট্যটেজি ফলো করা শরু করে দিয়েছে” । কিন্তু এবারও আমি থেকে যায়নি। নতুন ভাবে প্ল্যানিং করা শুরু করলাম, যাদের কাছে এতদিন পণ্য বিক্রি করেছি তাদের থেকে বাছাই করা কিছু ক্লায়েন্ট কে ফোন করে খবর নেয়া শুরু করলাম , যে পণ্যটি কেমন সার্ভিস দিচ্ছে কোন সমস্যা দিচ্ছে কিনা ইত্যাদি। রেডিও ফুর্তির একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়র বেশ বিরক্ত হয়েই বললেন “আপনার প্রোডাক্ট ভালো না, নষ্ট হয়ে গিয়েছে” । উল্লেখ্য প্রোডাক্টটি ছিল NOKIA BH 503 Bluetooth Headphone। পরদিন একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আমি উনার সাথে দেখে করি এবং কোন রকম প্রশ্ন না করে শুধু দুঃখিত বলে নতুন একটা প্রোডাক্ট তাকে দেই । ভদ্রলোক এতটাই ভালো ভালে ব্যাপার টা গ্রহন করে যে পরবর্তীতে গোটা পঞ্চাশেক হেডফোন শুধুমাত্র তার রেফারেন্সই বিক্রি করেছি।
অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ/সমস্যাঃ
সেলবাজার আর ক্লিকবিডি’র মাধ্যমে যখন নিজেকে নিয়ে যখন খুব ভালো উচ্চতায় ঠিক সেই সময়টায় অঘটন ঘটালো ক্লিকবিডি। উল্লেখ্য ক্লিকবিডি তে তখন অ্যাড দিতে টাকা লাগতো , হটাত করেই তারা অ্যাড এর জন্য অস্বাভাবিক রকম চার্জ করা শুরু করল এবং ফলাফল অধঃপতন। এতো বছর ধরে চলতে থাকা সাইটটি এক মাসের কম সময়ে অর্ধেকের বেশী ভিজিটর হারিয়ে ফেলল। শিখলাম ব্র্যান্ড তৈরি করতে অনেক সময় লাগে কিন্তু হারাতে সেকেন্ডও লাগেনা। সেই থেকে ক্লিকবিডি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে অনেকবারই মাঝে কিছুটা সফলতা পেলেও আর কখনই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি যার এক মাত্র কারণ মার্কেট সম্পর্কে সম্ভবত সঠিক ধারণাটি অর্জন করতে পারেনি।
মাত্রাধিক প্রতিযোগিতা এবং ব্র্যান্ড বিল্ডিং এর প্রয়োজনীয়তাঃ _ _ _ _ _ _
****** আজকে আর লিখছি না , আশা করছি কিছুদিন পর আবার লিখতে পরবো এবং একসময় পোস্টটি সম্পূর্ণ হলে ডক আকারে প্রকাশ করবো *******

চলবে ... 

No comments:

Post a Comment